অনন্য ভেষজ জিনসেং

এশিয়ান জিনসেং (Asian Ginseng)
https://dpeditworkshop.blogspot.com/
জিনসেং (ইংরেজি: Ginseng) Araliaceae পরিবারের Panax গণের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি মাংসল মূলবিশিষ্ট এক ধরনের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি উত্তর গোলার্ধে পূর্ব এশিয়াতে, বিশেষ করে চীন, কোরিয়া ও পূর্ব সাইবেরিয়াতে, ঠান্ডা পরিবেশে জন্মে।

বিশ্ব জুড়েই জিনসেং এক অনন্য ভেষজ। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মাঞ্চুরিয়ার (মাঞ্চুরিয়া (সরলীকৃত চীনা: 满洲; প্রথাগত চীনা: 滿洲; ফিনিন: Mǎnzhōu) উত্তরপূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত একটি বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চলের ঐতিহাসিক নাম। ... (সরলীকৃত চীনা: 东北; প্রথাগত চীনা: 東北; ফিনিন: Dōngběi) নামে অভিহিত করা হয়) পাহাড়ি ঢালে ছিল এদের বিপুল আস্তানা। চীনে তখন এর শিকড় ছিল মানুষের খাদ্য। ক্রমে ক্রমে অসাধারণ গুণাবলী প্রকাশিত হলে এর আধুনিক উত্তরণ ঘটে ওষুধ হিসাবে। এর শিকড়ের আকৃতি প্রায়শ দেখা যায় মানব দেহের মতো, নিচের দিকে দুভাগ হয়ে যাওয়া পায়ের মত, আবার কখনো দেখা যায় হাত-পা উভয়ই। জিনসেং নামটিও এসেছে চীনা শব্দ ‘রেনশেন’ থেকে যার অর্থ মানুষের পা। প্রাচীন চীনারা ভেবেছে, প্রকৃতি এদের মনুষ্যরূপ দিয়েছে কারণ, এরা মানুষের জন্য খুব হিতকর। যে কারণেই হোক আজকের দিনেও পৃথিবীতে চীনই সবচেয়ে বেশি জিনসেং ব্যবহার করে যা তাদের সমাজে-সংস্কারে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। এই ভেষজের চাহিদা দিনদিন বেড়ে যাওয়ার ফলে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের পর কোরিয়া থেকে এর আমদানি শুরু হয়েছে, বিনিময়ে চীনাদের কাছ থেকে কোরিয়ানরা সংগ্রহ করেছে সিল্ক। ১৯০০ শতকে বনজ জিনসেং শেষ হওয়ার উপক্রম হলে আমেরিকা, কানাডা ও কোরিয়াতে শুরু হয়েছে চাষাবাদ, যা ছিল ভারতে এলাচি চাষের মতই একটি কঠিন কাজ।
২০০ বছর ধরে বিভিন্ন দেশ থেকে, বিশেষত আমেরিকা থেকে জিনসেং রফতানি হচ্ছে চীনে কিন্তু আমেরিকার মানুষ এর ভেষজ গুণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেনি। বুনো জিনসেং-এর প্রতি, বিশেষত মনুষ্য আকৃতিবিশিষ্ট শিকড়ের প্রতি চীনাদের বেশ দুর্বলতা ছিল, বেশি মূল্য দিয়ে হলেও সেগুলো তারা কিনে নিত। তাদের এমন আচরণ দেখে আমেরিকানদের বিশ্বাস হয়েছে, চীনাদের জিনসেং ব্যবহারের বিষয়টি মূলত কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। আর এই ভাবনা মাথায় রেখে তারা বংশপরম্পরায় বনবনানী থেকে উদ্ধার করে গেছে অমূল্য জিনসেং, কখনো এর ভেষজ গুণ খুঁজে বের করেনি। বুদ্ধিমান চীনারাও জিনসেং নিয়ে কখনো উচ্চবাচ্য করেনি, যেন আমেরিকানরা যাই ভাবে ভাবুক, তাদের জিনসেং পেলেই হল। মাত্র ১৯৬০ সালের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী এই ভেষজের অশেষ গুণাবলী প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
বিভিন্ন আকৃতির জিনসেং (Different type Ginseng)
চীন দেশবিদেশ থেকে এই শিকড় আমদানি করেছে কিন্তু নিজেরা চাষ করতে পারেনি। জিনসেং চাষের প্রধান শর্ত ছায়া। প্রকৃতিতে ওক, ম্যাপেল, বিচ ইত্যাদি গাছের ছায়ায় এদের জন্মাতে দেখা যায়। কিন্তু চীনদেশে একসময় ছায়ার অভাব দেখা দিয়েছে নিদারুণভাবে কারণ বড় গাছ কেটে তারা রান্নাবান্না ও ঘর উষ্ণ রাখার লাকড়ি তৈরি করেছে। ভূমির নিচে জিনসেং-এর রাইজোম বা কন্দ হয় না, চারা হয় বীজ থেকে। বীজ মাটিতে পড়লে তা সহজে অঙ্কুরোদগম হয় না কারণ প্রস্তুতিপর্বে তাপমাত্রা আর মৌসুমে অভ্যস্ত হতে এর সময় লাগে প্রায় দুবছর। এরপর একপাতা বের হতে ২-৩ বছর, দ্বিতীয় পাতা বের হতে আরো ২-৩ বছর। কখনো ৩-৪টি পাতা না বের হলে ফল ধরে না। অর্থাৎ প্রকৃতিতে ৭-৮ বছরের আগে পুষ্ট হয় না জিনসেং-এর শিকড়।
গ্রিনহাউসে শেড করে এখন যে চাষ করা হয় তাতে ৪ বছরেই ফসল তোলা যায়, শিকড়ও মোটাতাজা হয় কিন্তু কার্যকারিতার দিক থেকে তেমন নয়, মূল্যও কম। তবে কম হলেও, এক পাউন্ডের মূল্য অন্তত হাজার ডলারের নিচে নয়, প্রাকৃতিক জিনসেং যার কয়েকগুণ বেশি। এখন অনেকে প্রকৃতিতে এর কৃত্রিম চাষ করার চেষ্টায় আছে, গাছের শেডের নিচে, যা গ্রিন হাউসে নেই। গ্রিনহাউসে চাষ করার একটি প্রধান অসুবিধা হল, যদি একবার ফসলে ‘ব্লাইট’ ছত্রাক দেখা দেয় তবে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা চাষের এলাকায় কারণ গাছগুলো খুব কাছাকাছি রোপন করা হয়। প্রকৃতিতে এই সমস্যা নেই, গাছগুলো থাকে দূরে দূরে। তবে ফসল তুলতে দেরি হয় কারণ গাছের প্রাকৃতিক জীবনচক্র, চাষের জীবনচক্রের প্রায় দ্বিগুণ। দীর্ঘকাল পরে হলেও এতে অর্থাগম হয় বেশি এবং রোগবালাইয়ের সম্ভাবনা থাকে সীমিত যা কখনো পুরো ফসল নষ্ট করে না।
আমেরিকান জিনসেং-এর চাষ শুরু হয়েছে প্রায় ৩০০ বছর আগে কানাডাতে। ক্যাথলিক মিশনারীরাই প্রথম লক্ষ্য করেছিল, উত্তর-পূর্ব চীনে মাঞ্চুরিয়ার মত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও আবহাওয়া কানাডা ও আমেরিকাতেও রয়েছে। এই সূত্র ধরে মাসতিনেক খোঁজাখুজির পর মন্ট্রিয়ল, নিউইয়র্ক এবং ম্যাসাচুসিটস্‌-এ পাওয়া গেল এর সন্ধান যা একই গণ প্যানাক্সের অন্তর্গত প্যানাক্স কুইনকে.ফোলিয়াস (Panax quinquefolius), আর এশীয় জিনসেং হল প্যানাক্স জিনসেং (Panax ginseng)। আকার-আকৃতি ও ভেষজগুণে দুটো প্রজাতিই খুব কাছাকাছি।
জিনসেং চাষ শুরু করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নিউইয়র্কের জর্জ স্টানটনের। প্রথমদিকে তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত কুশলী টিন-ক্রাফটের মানুষ; যা কেউ তৈরি করতে পারত না তিনি সেটা যেভাবেই হোক তৈরি করে ছাড়তেন। এই অধ্যবসায়ী মানুষটির স্বাস্থ্য ছিল রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের মত দুর্বল, কিন্তু মানসিক শক্তি ও অধ্যবসায় ছিল আইনস্টাইনের মত। আইস্টাইন বলতেন, ‘আমি জিনিয়াস ধরনের লোক নই, অন্যের সঙ্গে আমার তফাৎ হল, আমি সমস্যার সঙ্গে দীর্ঘতর সময় লেগে থাকি।’ জর্জ স্ট্যান্টন রোগজীর্ণ শরীরে টিন-ক্র্যাফটের কাজ ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে রইলেন জিনসেং চাষে। এ সময়ে খুব কষ্ট করে তাকে বনাঞ্চলে অবস্থান করতে হত। এমতবস্থায় কাজের প্রতি তার শ্রদ্ধা ছিল লক্ষ্যনীয়। হাতের তালুতে তিনি যখন জিনসেং-এর শিকড়কে রাখতেন তখন মনে হত, তিনি কোনো দোলনার শিশুকে সযত্নে ধারণ করছেন। অসাধারণ সাফল্যের পর ব্যর্থ চাষীরাই তাকে বলতে শুরু করেছিল, ‘ফাদার অব দি জিনসেং ইন্ডাস্ট্রি।’ এই অধ্যবসায়ী মানুষের মটো ছিল, ‘নিজে ক্ষয় হয়ে যাও তুমি, কিনতু মরিচা ধরিয়ো না।’
বাজারে যে সব জিনসেং ওষুধ বা টনিক হিসাবে পাওয়া যায় তাতে অনেক কিছুর মিশাল থাকে। বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য অন্তত ৫টি গাছকে এখন জিনসেং বলে অভিহিত করা হয় এবং নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা হয়।
আদি জিনসেং (Panax ginseng)
আমেরিকান জিনসেং (Panax quinquefolius)
ইন্ডিয়ান জিনসেং (Withania somnifera)
সাইবেরিয়ান জিনসেং (Eleutherococcus senticosus)
ব্রাজিলিয়ান জিনসেং (Pfaffia paniculata)
উল্লিখিত সব ক’টি জিনসেঙেরই সাধারণ গুণ ‘অ্যাডাপ্টোজেন’ হিসাবে কাজ করা, অর্থাৎ দৈহিক ও মানসিক চাপকে সহনশীলতার মধ্যে নিয়ে আসা। কুখাদ্য খাওয়া, দূষিত পরিবেশে বাস করা, আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া, মানসিক চাপ বহন করা ইত্যাদি নানা কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায় এবং অকালবার্ধক্য দেখা দেয়। অ্যাডাপ্টোজেন দেহমনকে এসব ক্ষতিকর অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় বা ‘অ্যাডাপ্ট’ করে নেয়। এতে মানুষের জীবন সুখী, অর্থবহ হয়ে ওঠে এবং প্রকারান্তরে তার আয়ু বর্ধিত হয়; এক অবৈজ্ঞানিক হিসাবে যা ১২ বছরের মত। তবে কেবল বেঁচে থাকাটা চরম সার্থকতা নয়। শয্যাশায়ী হয়ে ঘরে শুয়ে থাকা আর হাওড়ে মাছ ধরতে যাওয়ার মধ্যে ‘কোয়ালিটি অব লাইফ’-এর বিস্তর তফাৎ রয়েছে।
সাধারণভাবে অ্যাডাপ্টোজেন হিসাবে কাজ করলেও একেকরকম জিনসেং একেকদিকে উন্নত। সাইবেরিয়ান জিনসেং, যুদ্ধরত সৈনিকদের অতিরিক্ত শক্তি যোগানোর জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে, এশীয় জিনসেং যৌবন অটুট রাখার জন্য, আমেরিকান জিনসেং দৈহিক জড়তা ও জীবকোষের স্বাস্থ্যের জন্য, ইন্ডিয়ান জিনসেং ইন্দ্রিয়শৈথিল্য ও বিপাকের জন্য উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশের ‘ইন্ডিয়ান জিনসেং’কে আমরা অশ্বগন্ধা বলে জানি। এর শিকড় থেকে অশ্বমূত্রের মত বোঁটকা গন্ধ নির্গত হওয়ার কারণে হয় এই নামকরণ। গন্ধের কারণে একে চিহ্নিতকরণে সুবিধা হলেও ওষুধ হিসাবে সেবন করতে যেন নাকে একটা গন্ধ-ভাপ এসে লাগে। যা হোক, এর গুণপনার কিন্তু কোনো শেষ নেই। আয়ুর্বেদ একে বলবীর্যের জন্য, ঠাণ্ডা-কাশি, শ্বেতী রোগ, পায়ের ফোলা, হার্টের অসুখ, ফোড়া ওঠা, শিশুদের কৃশতায়, গর্ভিনী দৌর্বল্য ইত্যাদি রোগে ব্যবহার করে।
শুধু পুরুষ নয়, নারীদের জন্যও জিনসেং নানা কাজ করে থাকে। বেদনাদায়ক পিএমএস, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এবং মেনোপজে এর ব্যবহার সঙ্গত।
মেনোপজের পর হাড়ের ঘণত্ব কমে যায় বলে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে সহজে ফ্রাকচার হতে পারে। এমতাবস্থায় জিনসেং সেবনে এই অবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়। অ্যান্টি-এজিং গুণাবলী থাকার কারণে জিনসেংকে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন প্রসাধনীতেও। মোটামুটি বিচারে আমেরিকান জিনসেং মহিলাদের জন্য এবং এশিয়ান জিনসেং পুরুষদের জন্য অধিক উপযোগী। অধিক মাত্রায় জিনসেং কখনো দীর্ঘদিন একটানা সেবন করা ঠিক নয় যার স্বাভাবিক মাত্রা দিনে এক বা দুইবার করে ২০০-৫০০ মিলিগ্রাম পাউডার, দুধ পানি ইত্যাদির সঙ্গে সেব্য।
বনেবাদাড়ে এত খোঁড়াখুড়ির পরও প্রকৃতিতে মাঝেমধ্যে এখনো কিছু জিনসেং পাওয়া যায়। চাষের জিনসেং থেকে একে সনাক্ত করার একটি উপায় হল, মাথার কাছে এর অতিরিক্ত কাণ্ডের উপস্থিতি, যে কাণ্ডের চারদিকে পত্রবৃন্তের ক্ষত থেকে অনুমান করা যায় গাছটির বয়স। এই কাণ্ড ভূমির উপরে থাকে, কিন্তু কখনো কখনো কাণ্ডহীন হয়ে মাটির নিচে বেমালুম অদৃশ্য হয়ে যায় যা খুঁজে বের করার সাধ্য কারো থাকে না। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, এটা হয়তো গাছের বংশরক্ষার এক অভিনব কৌশল। এতে আশাবাদ এই যে, অতি পুরাতন জাতের জিনসেং অত সহজে পৃথিবী থেকে লুপ্ত হবে না।
অনুপম ভেষজ অশ্বগন্ধা থাকতে আমাদের বিদেশী জিনসেং না হলেও চলে, যদিও বিদেশি ভেষজের ভিন্ন ধরনের উপকারিতা আছে। উপমহাদেশের যে সব পাহাড়িঢালের এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫-৫০ ইঞ্চির মত সেখানে পত্রমোচী গাছের নিচে এদের প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কঠিন নয়। এ ছাড়া একে যত্নে রেখে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশেও জন্মানো সম্ভব। তবে এক দেশের গাছ আরেক দেশে জন্মালে কিছু অঙ্গসংস্থানিক (Morphological) পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এতে শিকড় চিকন, মোটা, লম্বা কিংবা রসালো, নানারকম হতে পারে। এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হল, শিকড়ে কী কী উপাদান আছে আমাদের কল্যাণের জন্য, সেটুকু জানা। (সুত্রঃ ফেসবুক)

এশিয়ান জিনসেং (Asian Ginseng ) https://dpeditworkshop.blogspot.com/ জিনসেং  (ইংরেজি:  Ginseng ) Araliaceae পরিবারের Panax গণের একটি উ...

কালি ঝোপ ও মরিয়ম ফুল

মরিয়ম ফুল, আরবের আঞ্চলিক নাম 'কাফ মারিয়াম' বা মারিয়ামের কব্জি

খোলা মরুতে জোর বাতাস বইছে। সে বাতাসে গড়িয়ে চলেছে বাতাবিলেবু আকৃতির এক ধরনের গোলাকার বস্তু। কাঁকর পাথর বালিয়াড়ি ডিঙিয়ে চলছে তো চলছেই যতক্ষণ না খাদে বা জলের কিনারে গিয়ে আটকে পড়ছে। জলে ডুবে সেই গোলক খুলে যাচ্ছে, খুলে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতেও। এটাই এর স্বভাব, আমাদের গল্প-শোনা, স্বল্পদেখা মরিয়ম ফুলের স্বভাব। যীশুমাতা মরিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে গোটা পৃথিবী একে মরিয়ম ফুল বলে চেনে যার আচরণগত একটি ইংরেজি নাম টাম্বল্‌-উয়িড (Tumbleweed)। ইংরেজি টাম্বলিং শব্দের সঙ্গে আমাদের সমধিক পরিচয় ৩০০ বছরনের পুরানো নার্সারি রাইমের ‘জ্যাক অ্যান্ড জিল’ ছড়া থেকে, শেকস্‌পিয়ারও যার উল্লেখ করেছেন কয়েক জায়গায়। বাতাসের প্রকোপে যখন ছোট মরিয়ম ফুল কিংবা কালি-ঝোপ গড়াতে থাকে তখন স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ক’টি শব্দ...

Jack fell down and broke his crown
And Jill came tumbling after
মূলত, এটাকে ফুল বলা হলেও আদতে ফুল নয়, ফুলপ্রতিম বলা যায়। বর্ষজীবী এই গাছটির ফুল হয় খুব ছোট, সাদা রঙের। গোটা গাছকেই ফুলের মতো দেখায় যখন পরিণত গাছের শাখা-প্রশাখা ভেতরের দিকে বেঁকে গিয়ে গোলকের আকার ধারণ করে। এর ভেতরের দিকে মুড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে ট্রিহ্যালোসের (Trihalose) ভূমিকা যা একপ্রকার ডাইস্যাকারয়েড সুগার। বাতাসের তোড়ে শুকনো খটখটে গোলকের কাণ্ডটা একসময় ভেঙে গিয়ে তৈরি হয় গড়ানো উদ্ভিদ, জোর বাতাসে যাদের চলমানতা দেখে মনে হতে পারে জীবন্ত কোনো ভ্রমণশীল পরিযায়ী প্রাণীর দল ছুটে চলেছে মরুভূমি জুড়ে।
সবুজ মরিয়ম গাছ, দক্ষিণ কাতার- সূত্রঃ Asergeev
আমাদের দেশে, ভারত পাকিস্তানে এমনকি মালয়েশিয়াতেও এই ফুলের একটি ভিন্ন পরচয় আছে, যা বেশ বিস্তৃত। সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে শায়িত মায়ের পাশে ঈষদুষ্ণ গরম জলে এই মরিয়মফুল তথা মরিয়মগাছ ডুবিয়ে রাখা হয়। জলে ভিজে ক্রমশ খুলতে থাকে মরিয়ম ফুল আর প্রসূতিও মানসিকভাবে স্বচ্ছন্দ অনুভব করতে থাকেন যেন ফুল খোলার সাথে জরায়ূবিস্তৃতির একটি নৈসর্গিক যোগাযোগ আছে। এক সময় পাত্র থেকে একটু জলও পানের জন্য দেয়া হয় জন্মদায়িনীকে যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। নানাবিধ খনিজসমৃদ্ধ এই জলে থাকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা পেশী নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কিছু কিছু গাছের বীজবিসরণের বা বংশবিস্তারের অভিনব উপায় থাকে, মরিয়ম গাছেরও এমন। পুষ্ট বীজগুলো গোলকের ভেতরে আটকে থাকে, চলমান অবস্থায় সহজে বাইরে বেরুতে পারে না। জলস্পর্শে অবয়ব খুলে যাওয়ার ফলে বীজগুলো মুক্তি পায়। পরিমিত জল পেলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গোলকের ভেতরে গজিয়ে ওঠে পত্রাবলী। দেখে ভ্রম হয়, যেন মরিয়ম গাছ পুনর্জীবিত হয়ে পাতা ছড়িয়েছে। এর বীজের একপ্রান্তে থাকে কিছুটা চামচ আকৃতির উপাঙ্গ, বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে ডাংগুলির মতো লাফিয়ে উঠে দূরে চলে যায় বীজ, যা বীজবিসরণের ঈঙ্গিতবহ একটি প্রক্রিয়া। এই অভাবনীয় দৃশ্য দেখার জন্য অবশ্য মানুষ থাকে না বিরান মরুতে। এদিকে ঊর্বরা শ্যামল বাংলায় বিসরণের লক্ষ্যে জোর বাতাসে শিমুল তুলার বীজ উড়তে থাকে বাতাসে, যেন তুলাবীজ থেকেই সৃষ্টি হয় পেঁজাতুলো সাদা মেঘ। এই বীজগুলো ভাস্‌পাখিদের মতো উড়তে থাকে মাইলের পর মাইল, কেউ জানে না কোন দেশে গিয়ে স্পর্শ করবে ভূমি, গজিয়ে উঠবে সকন্টক শিমুল-শিশু।
মরুতে মরিয়ম ফুলের বিস্তার- সূত্রঃ বোরিস স্নো, প্লান্টারিয়াম
মরিয়ম ফুলগাছের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানাস্ট্যাটিকা হাইরো.চান্টিকা (Anastatica hierochuntica) যেখানে অ্যানাস্ট্যাটিকা গণের অর্থ, এমন গাছ যা জলের সান্নিধ্যে পুনরুজ্জীবিত হয়। এমন গাছের সংখ্যা খুব কম। বাজারে বিক্রীত নোভেল্টি প্ল্যান্ট সেলাজিনেলা লেপিডোফিলা, এয়ারপ্ল্যান্ট টিল্যান্ডসিয়া, লাইকেন এ ধরনের গাছ। গাছের বাকল বা পুকুরের জল শুকিয়ে গেলে ছত্রাক-শৈবাল মিশ্রিত মিথোজীবী লাইকেন শুকনো মড়মড়ে হয়ে পড়ে কিন্তু জলের সমাগমে আবার প্রাণ ফিরে পায়।
ক্ষুদ্রাকৃতি মরিয়ম ফুলগাছের বীজ বাঁকানো ডালপালার ভেতরে বন্দী অবস্থায় থাকে কিন্তু বিশাল আকারের গড়ানো উদ্ভিদ কালি ট্রেগাসের (Kali tragus) ক্ষেত্রটা ভিন্ন। এক মিটারের মত ব্যাসের গোলাকার এই গাছ গড়িয়ে চলার পথে বীজ বোনা মেশিনের মতো বপন করে যায় অসংখ্য বীজ। একটি মাঝারি গাছে বীজের সংখ্যা দু’লাখের কম নয় যা বৈরি পরিবেশে প্রায় পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় টিকে থাকতে পারে। কালি ট্রেগাসকে রাশিয়ান থিসল্ও বলা হয় কারণ সেখান থেকেই প্রথমে আমেরিকায় এর আগম ঘটেছিল ১৮৭০ সালে, তিসি বীজের সঙ্গে। এরপর এটা ছড়াতে ছড়াতে আলাস্কা ছাড়া আমেরিকার সব স্টেটগুলোতেই ছড়িয়েছে, এখন কানাডাতেও এর উপস্থিতি জানা গেছে; দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকাও বাদ নেই। কালি একপ্রকার আগ্রাসী রুডেরাল প্ল্যান্ট (Ruderal plant) যা উপদ্রুত এলাকা যেমন অনুর্বর কন্সট্রাকশন সাইট, সমুদ্রতীরবর্তী নোনামাটি ও রাবিশের মধ্যে অনায়াসে জন্মাতে পারে।
কালি ঝোপ (Kali tragus)- সূত্রঃ Dcrjsr, W. Commons
কালি ট্রেগাসকে নিয়ে মানুষের চিন্তাভাবনা ও কষ্টের শেষ নেই। ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আগে একে কৌতূহলদ্দীপক একটি রোলিং উইড বলে মনে হলেও এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে এর যন্ত্রণায় কিছু প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকদের বাড়িঘর পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যখন একটি একতলা বাড়ি সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে যায় কালির জমায়েতে, বাড়ির বাসিন্দারা যখন বেরুবার পথ পায় না তখন সাহায্য পাবার আশাও প্রায় অবান্তর মনে হয়। হাইওয়ের উপরে এমনভাবে এরা জমে যায় এরা যে চক্রযানের মাধ্যমে সাহায্য পৌঁছানোর পথ সুগম থাকে না। কখনো বিল্ডিংয়ের পাশে বিশাল স্তূপে কালিঝোপ জমে গেলে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কায় লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। কালিগাছের ভেতরে থাকে ভূমি থেকে শোষিত নাইট্রেট যা তীব্র দহনে সহায়তা করে। কাঠ বা কংক্রিটের ফেন্সে এগুলো আটকে ক্রমশ এমন নিরেট হয়ে ওঠে যে বাতাসের তোড়ে ফেনস্ উলটে পড়ার অবস্থা হয়। এই কন্টকময় আগাছা গ্লাভস্ ছাড়া ধরাও যায় না, অনেকের প্রচণ্ড রকম অ্যালার্জিও হতে দেখা যায়। প্রতিকারের জন্য একে জৈবনিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে আনতে পারলে ভাল, নিয়ন্ত্রিত আগুনে দহন করেও এদের দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চলছে।
টেক্সাসে কালিঝোপের কবলে বাড়িঘর- সূত্রঃ Josh Pitman, Texas
কালি আগাছার নানাবিধ অগুণের মধ্যেও এর কিছু ভাল দিকও আছে। এর সঙ্গে বর্তমানে আমরা পেরে উঠছি না দুর্বল পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির কারণে। যথেষ্ট খনিজসমৃদ্ধ এই গাছ থেকে দরকারী খনিজ সংগ্রহ করা একদিন হয়ত সম্ভব হবে। নষ্ট ভূমি থেকে এরা সীসা, আর্সেনিক, পারদজাতীয় বেশ কিছু ক্ষতিকর ধাতু শুষে নিতে পারে। অতএব নষ্টভূমি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কালি উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। কচি অবস্থায় এটি আকর্ষণীয় পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে এমনকি শুকনো হওয়ার পরেও পানিতে ভিজিয়ে পশুখাদ্য তৈরি করা যায়। পেছনে লেজের নিচে চর্বি জমা দুম্বাজাতীয় প্রাণী এবং উট কাঁটাসহ এগুলো অনায়াসে খেতে পারে। অকজ্যালেট এবং নাইট্রেটের পরিমাণ কমাতে পারলে কালিকে ব্যবহার করা যায় মানুষের খাদ্য হিসাবেও যা রফতানির চিন্তা করা অবান্তর নয়। প্রযুক্তির বলে, চূর্ণীভূত গাছ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দরকারি খনিজ পদার্থগুলো বের করে নেয়া যেতে পারে। তুরস্কে ইতোমধ্যে চূর্ণ গাছের সঙ্গে ফলের খোসা ইত্যাদি মিশিয়ে একধরণের উৎকৃষ্ট পল্লী-জ্বালানিও উদ্ভাবিত হয়েছে।
বাংলাদেশ কালি-অধ্যুষিত নয়, বৃষ্টিভেজা প্রতিকূল পরিবেশে তার সম্ভাবনাও নেই, কিন্তু অন্য আগাছা রয়েছে আমাদের যার নিরাময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশও অবদান রেখে চলেছে। কালি ট্রেগাস ইতোমধ্যেই একটি প্রকট আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালিকে কেন্দ্র করে কিছু দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রকারন্তরে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির উপরেও বর্তাবে। এই গাছ নিরাময়ে জৈবনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে একে বর্জন করার পাশাপাশি ব্যবহারের দিকগুলোও গোটা বিশ্ববাসী ভেবে দেখতে পারে!
---

ছবি-১ মরিয়ম ফুল, আরবের আঞ্চলিক নাম 'কাফ মারিয়াম' বা মারিয়ামের কব্জি- সূত্রঃ জায়েদ ফরিদ
ছবি-২ সবুজ মরিয়ম গাছ, দক্ষিণ কাতার- সূত্রঃ Asergeev
ছবি-৩ মরুতে মরিয়ম ফুলের বিস্তার- সূত্রঃ বোরিস স্নো, প্লান্টারিয়াম
ছবি-৪ কালি ঝোপ (Kali tragus)- সূত্রঃ Dcrjsr, W. Commons
ছবি-৫ টেক্সাসে কালিঝোপের কবলে বাড়িঘর- সূত্রঃ Josh Pitman, Texas

মরিয়ম ফুল, আরবের আঞ্চলিক নাম 'কাফ মারিয়াম' বা মারিয়ামের কব্জি খোলা মরুতে জোর বাতাস বইছে। সে বাতাসে গড়িয়ে চলেছে বাতাবিলেবু আক...

বেথুল গাছ Bethlehem


dpeditworkshop.blogspot.com
dpeditworkshop.blogspot.com

dpeditworkshop.blogspot.com
dpeditworkshop.blogspot.com
dpeditworkshop.blogspot.com
dpeditworkshop.blogspot.com


Banyan tree and fruit

English name -Calamus Palm.

Scientific name -Calamus gibbsianus

Other names are: Betfell, Bettun, Bethune, Bethul, Betula, Battu, Bettien.

Rattan plants of Bangladesh, Bhutan, Cambodia, Laos, Myanmar, Thailand, Vietnam, India, Java and Sumatra region.

The beetle is round or rounded with a round shape and it is covered with tangled fruit. The seeds are strong. Raw fruits are green or rounded greenish or white in color. This resulted in bundle bands. There are up to 200 fruits per batch. Battagate flowers come in October and fruit in March-April. This is an unexpected result but many are very dear to many.

Rattan is well-fed in wet and jungle lowlands of tropical and subtropical regions. It is currently endangered to the housing crisis.

Beta gachachchikan, tall, pungent and very strong. It is grown in the form of jungle bush. "

Struggling to tie one tiger ...

Rural racket is centrally located in Betagachha. Betagachas were so scattered that if a tree was torn, many faraway trees would be shaken. During the month of Chaitra, the bunch of bamboo bamboo bamboo or beetle no longer falls in the eye.

A extinct fruit of Bangladesh. Even before 2-3 decades, we could see different cane in the rural areas of our country, at the bottom of the canoe. No longer seen

At present, some of the weeds are seen in greater Sylhet, Chittagong and Chittagong Hill Tracts. Various types of furniture and home furnishings are made from rattan. These are spectacular, durable, precious, aesthetic and natural.
Rattan trees are one of the most essential raw materials in our cottage industry. Cutting the soil, making jam or tamas or trunks for special purposes, women's cold stools, salon rails, rice stools, hand fan, hand sticks, chairs, sofa, swinging, floral making, etc. Rattan is considered as a valuable, durable and smart class product.

Because of the decrease in the weeds, Betfal has now become the most valuable fruit. To protect our bio-diversity, it is important to be careful about planting and maintaining the weeds.
Extinctly this fruit results in thorny cane tree. It's not as soft as it is.

Look like a small cube, covered with fiber
In the month of Baishakh in Bengali and rotten fruit in the month of Jupiter. This fruit is sweetened by the type of soil, but it is also talked about in space.

With the loss of the cane trees in the village, the beetle is now lost.
Thousands of fluorescence assemblies in Bengal's soil quality. Riverbed sediments, rain gave our country a fertile land. There are more than five thousand species of wild plants in the country. But sadly many wild vegetation is now on the way to extinction. Even wild species of wild birds are being lost in the invasion of foreign trees. There is not much research on our own plants. In order to plant and cultivate bamboo fruit trees, wood trees and flowering plants, towns, villages and natural forests are being used. Many colonies and individuals are encouraging people in the cultivation of foreign fruits and vegetables. It has lost the native trees.
Our Kaviraj, indigenous, rural people are still dependent on native plants for various medicines and fruits. All of our poets have won the lands and trees of our country.

Bethel is a very desirable result of our childhood. We could not easily get it. We used to call it Batuinya Fruit If fruit was mature, I would have used to drink in the sand. Even then, on the legs, bracelets of cotton cloth bent. When the rosy part of the fruit fell out of the fruit, he used to share with the people of Anand village.
Rattan harvester, evergreen, arahi palm. Tall is tall, thorny and unshaven. The narrow and cylindrical stem width is usually 5-15mm. The new leaves emerge and grow from the front of each stem. With the increase of the stem, the lower part of the tissue becomes stabilized. For holding a container, the thorn-holder trailer is released. A kind of sweet scent comes from the tree before flowering flowers. Then the bees, ants, the flies come in the juice of the drunk to drink.

Once upon a time, we suffered many thorns and made a lot of salt by making salt and making it very fun. Fruits are available in the market.
Rattan rice in different parts of the country is eaten as a curry.


The current generation of boys knows what the rattan fruit is, they want to explore the encyclopaedia of the tree.
⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛⇛
বেতগাছ ও ফল
ইং‌রে‌জি নাম -Calamus Palm.
বৈজ্ঞানিক নাম -Calamus gibbsianus.
অন্যান্য নাম- বেতফল, বেত্তুন, বেথুন, বেথুল, বেতগুলা, বেতগুটি, বেত্তুইন ।
বেত গাছ বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ।
বেতফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার আশ দিয়ে ঢাকাছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি ফল। বীজ শক্ত। কাচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। এটি থোকায় থোকায় ফলে। প্রতি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়।
বেত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ভেজা ও জংলা নিচুভূমিতে ভাল জন্মে। এটি বর্তমানে আবাসন সংকটের জন্য বিপন্ন।
বেতগাছচিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত। এটি জঙ্গলাকীর্ন কাঁটাঝোপ আকারে জন্মে।"
একগাছ টান দিলে বেতগাছ লড়ে...
গ্রাম্য এ ধাঁধাঁটি বেতগাছ কেন্দ্রিক। বেতগাছ এতবেশী ছড়িয়ে পড়তো যে একটি গাছে টান দিলে অনেক দূরের গাছও নড়ে ওঠত। চৈত্র-মাসে আংগুরের মতো থোকা থোকা নয়নাবিভুত করা বেতুন বা বেতফল এখন আর চোখেই পড়ে না।
বাংলা‌দে‌শের এক‌টি বিলুপ্ত প্রায় ফল। ২-৩ দশক আ‌গেও আমা‌দের দে‌শের গ্রামাঞ্চ‌লের ব‌নেজঙ্গ‌লে, নিচু ডোবার ধা‌রে নানা রকম বেত দেখা যেত। এখন আর দেখা যায় না
বর্তমা‌নে বৃহত্তর সি‌লেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রা‌মে কিছু বেতগাছ দেখা যায়। বেত থে‌কে বি‌ভিন্ন ধর‌নের আসবাবপত্র ও গৃহসয্যার সৌ‌খিন সামগ্রী প্রস্তুত করা হয়। এগু‌লো দৃ‌ষ্টিনন্দন, টেকসই, মূল্যবান, নান্দ‌নিক এবং প্রাকৃ‌তিক।
বেত গাছ আমাদের অতি প্রয়োজনীয় ও কুটির শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল। মাটি কাটার ওড়া, বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি তৈরি, নারীদের তৈরি শীতল পাটি, নামাজের পাটি, ভাত খাওয়ার পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠি, চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরিসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর। বেত একটি মূল্যবান, টেকসই এবং স্মার্ট শ্রেণীর দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত।
বেতগাছ ক‌মে যাওয়ায় বেতফল এখন দামি ফল হ‌য়ে উ‌ঠে‌ছে। আমা‌দের জীব বৈ‌চিত্র রক্ষা‌র্থে অ‌ধিক প‌রিমা‌ণে বেতগাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষ‌নে যত্নবান হওয়া আবশ্যক।
বিলুপ্তপ্রায় এ ফল কাঁটাযুক্ত লতার বেত গাছে ফলে। লতার মতো হলেও এটি নরম প্রকৃতির নয়।
ছোট ছোট গুটির মতো দেখতে, আঁশ দিয়ে ঢাকা থো
বাংলা মাসের বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে বেত ফল পাকে।মূলত মাটির প্রকার ভেদে এই ফল মিষ্টি হয়, আবার স্থান ভেদে টক হয়।
গ্রামে বেত গাছ হারিয়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বেতফলও এখন হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলার মাটির গুণে এখানে হাজারো তরুলতার সমাহার। নদীবাহিত পলি, বৃষ্টিপাত আমাদের দেশকে দিয়েছে এক উর্বর ভূমি। দেশে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি প্রজাতির বন্য গাছপালা। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক বন্য গাছগাছড়াই এখন বিলুপ্তির পথে।আবার ভিনদেশি গাছের আগ্রাসনেও হারিয়ে যেতে বসেছে বুনো প্রজাতি। আমাদের নিজস্ব গাছপালা নিয়ে তেমন গবেষণা হচ্ছে না। ভিনদেশের ফলের গাছ, কাঠের গাছ ও ফুলের গাছ রোপণ এবং চাষের জন্য শহর, গ্রামের মেঠোপথ ও প্রাকৃতিক বন ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক মহল ও ব্যক্তি বিদেশি ফল-সবজির চাষাবাদে মানুষকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। এতে দেশী গাছ গুলি হারিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের কবিরাজ, আদিবাসী, গ্রামীণ লোকজন এখনো নানা ওষুধ ও ফলের জন্য দেশীয় গাছপালার ওপরই নির্ভরশীল। আমাদের সব কবিই আমাদের দেশের প্রকৃতি ও গাছপালার জয়গান করেছেন।
বেতফল আমাদের ছোটবেলার এক অতি কাঙ্ক্ষিত ফল। আমরা সহজেই যাকে পেতাম না। আমরা ছেলেবেলায় একে বলতাম বেতুইন ফল। ফল পরিপক্ব হলেই বেতঝাড়ে হানা দিতাম সাবধানে। তারপরও পায়ে, জামা-কাপড়ে বেতের কাঁটা যেত বিঁধে। ফলের বাইরের খোলস ফেলে যখন রসাল অংশটা হাতে আসত, তখন সে আনন্দ গ্রামের কিশোর-কিশোরীরা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করত।
বেত কাঁটাময়, চিরসবুজ, অরোহী পাম। কাণ্ড লম্বা, কাঁটাযুক্ত ও শাখাহীন। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫-১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়। বেতে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি আসে সেই রস খেয়ে মাতাল হওয়ার জন্য।
একসময় আমরা অনেক কাঁটার আঘাত সহ্য করে বেতুন এনে লবণ মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে তা খুব মজা করে খেতাম। ফল বাজারে পাওয়া যায়।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেতের কচি কান্ড তরকারি হিসেবেবে খাওয়া হয়।
বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের জানে ই না বেত ফল কী, তারা বেতফল খুঁজতে গাছের বিশ্বকোষ চষে বেড়াতে হয়।

dpeditworkshop.blogspot.com dpeditworkshop.blogspot.com dpeditworkshop.blogspot.com Banyan tree and fruit English name -...